বয়স বাড়লে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কেও আসে কিছু পরিবর্তন। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া এড়িয়ে চলা সম্ভব। আপনি জানেন কি? বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে রাখতে কিছু সহজ পদ্ধতি রয়েছে, যা নিয়মিত অনুশীলন করলে আপনার স্মরণশক্তি এবং চিন্তাশক্তি টাটকা থাকবে। আজকের এই লেখায় আমরা শেয়ার করছি ৯টি কার্যকর পদ্ধতি, যা আপনাকে বয়স বাড়লেও মস্তিষ্কের সজীবতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
১. রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের ভারসাম্য আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো অস্বাস্থ্যকর হলে মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে। তাই, এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করতে:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন
- নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের পরীক্ষা করান

উদাহরণ: একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্মৃতিভ্রান্তি হতে পারে, যার জন্য প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ।
২. ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করুন:
ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং স্মরণশক্তি কমে যেতে পারে। তাই, মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য ধূমপান পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এবং মদ্যপানের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে।
উদাহরণ: যারা ধূমপান করেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বয়স বাড়লে ধীরে ধীরে কমে যায়।
৩. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন:
বয়স বাড়লেও শরীর ও মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখতে ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি শারীরিক কাজ মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়, যা স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাশক্তির উন্নতিতে সহায়তা করে।
উদাহরণ: গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ৩০% কমে যায়।
৪. মস্তিষ্কবান্ধব খাদ্য গ্রহণ করুন:
মস্তিষ্ককে সজীব রাখতে সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। কিছু খাদ্য যেমন—সবুজ শাকসবজি, বাদাম, বীজ, সামুদ্রিক মাছ এবং অলিভ অয়েল মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও, “মাইন্ড ডায়েট” অনুসরণ করলে বয়সজনিত ক্ষয় কমে।
উদাহরণ: গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সামুদ্রিক মাছ যেমন সালমন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৫. মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখুন:
মস্তিষ্ককে সচল রাখতে নতুন কিছু শিখুন। নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো বা পাজল খেলা—এই ধরনের কাজ মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সক্রিয় রাখে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখে।
উদাহরণ: একজন গবেষক বলছেন, “পাশ্চাত্য দেশে যারা প্রতিদিন কিছু নতুন শিখছেন, তাদের মধ্যে মস্তিষ্কের বয়সজনিত ক্ষয় ২০% কম হয়।”

৬. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন:
একাকীত্ব মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে। তাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখুন।
উদাহরণ: যারা একাকী জীবনযাপন করেন তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি ২৬%-২৮% বেশি।
৭. নিয়মিত যৌন জীবন বজায় রাখুন:
মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং সজীবতা বজায় রাখতে যৌন জীবন গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত যৌন তৃপ্তি মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখে এবং এটি মস্তিষ্কের কোষের পুনর্গঠনেও সাহায্য করে।
উদাহরণ: গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যৌন জীবন চিরস্থায়ী মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৮. মস্তিষ্কের খেলা খেলুন:
পাজল, দাবা, স্যুডোকু বা স্মৃতিনির্ভর খেলা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। যদিও এগুলি ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে ১০০% কার্যকর নয়, তবে এটি মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণ হিসেবে কাজ করে।
উদাহরণ: বিশ্বজুড়ে দাবা খেলার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে, স্মৃতিশক্তি বাড়ানো সম্ভব হয়েছে অনেকের জন্য।
৯. পর্যাপ্ত ঘুমান:
ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বর্জ্য পদার্থ দূর করে, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত জরুরি। দিনপ্রতি ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
উদাহরণ: যারা ৫ ঘণ্টা বা তার কম ঘুমান, তাদের ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
বয়স বাড়লে কিছু ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক, তবে যদি বারবার একই প্রশ্ন করেন, পরিচিত মানুষের নাম ভুলে যান বা দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা হয়—তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
উদাহরণ: যদি আপনিও নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে চিন্তিত হন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষত বয়স ৫০-এর উপরে হলে।